Documentary on Autism লড়াইটা ছিল অটিজমের সাথে

আজ আমি আপনাদের শোনাতে চলেছি আমি আর আমার ছোটমেয়ে আদ্রিজার কথা। আদ্রিজার বর্তমান বয়স 7 বছর সে একজন অটিস্টিক চাইল্ড, আপনারা তাকে দেখে এখন কিছুই বুঝতে পারবেন না, এখন সে প্রায় স্বাভাবিক। আমি অম্বিকা সাহা, আমরা দুজন আর আমাদের দুটি মেয়ে এই আমাদের সংসার। বড় মেয়ের বর্তমান বয়স এগারো।
আমাদের সমাজে অটিজম বাচ্চাদের স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া হয় না। তাই ঘরে বাইরে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন আঘাত বিভিন্ন সময় পেয়েছি সব থেকে বেশি আঘাত পেয়েছি ঘরের মানুষের কাছ থেকে। অনেক খারাপ কথা, সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমায় প্রতিনিয়ত। অটিজম সম্পর্কে কোন ধারণাই আমার ছিলনা কিন্তু তাও অটিজম আক্রান্ত মেয়ের জন্য কেউ আঘাত করতে ছাড়েনি।
আদ্রিজা তখন অনেকটাই ছোট, ও যার কোলে যেতে চাইত না তার কোলে কোন অবস্থাতেই যেত না, কেউ যদি জোর করে কোলে নিত তাহলে সে ততক্ষণ পর্যন্ত কান্নাকাটি করত যতক্ষণনা আমি আদ্রিজাকে কোলে নিতাম। আদ্রিজা আমার স্পর্শ এতো ভালোবাসতো যে ঘুমের ঘোরেও কেউ তাকে কোলে নিলে সে কান্নাকাটি করত, মা ছাড়া আর অন্য কারো কোলে যেত না। এমনকি আমি তার চোখের আড়ালে হলেই সে কান্নাকাটি করত অর্থাৎ আমাকে সে কখনোই চোখের আড়াল হতে দিত না। এর জন্য আমাকে আমার শ্বশুর বাড়ির লোক বলতো মেয়ের এই অবস্থার জন্য নাকি আমিই দায়ী, এই খারাপ অভ্যাস আমি তৈরি করেছি, আমি কোলে নিয়ে নিয়ে এইরকম অভ্যাস করিয়েছি। আসলে আমি আমার বাড়ির কাজ না করার জন্যই আদ্রিজা কে এইভাবে তৈরি করেছে। আর আমাকে এই বুদ্ধি নাকি আমার মা-বাবা দিয়েছে, তাই তাদের কেউ শুনতে হয়েছে অনেক কথা। আদ্রিজার বয়স যখন মাত্র আট মাস তখন তাকে আমি আমার শ্বাশুড়ির কাছে রেখে একবার দুই ঘণ্টার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি আদ্রিজা ভীষণ কাঁদছে, আমি তাকে কোলে নিতেই সে চুপ হয়ে যায়। সেই দুই ঘন্টায় আদ্রিজাকে আমার শাশুড়ি মা এক চামচ দুধও খাওয়াতে পারেনি, চুপ হওয়ার পর আদ্রিজার ঠাকুমা তার বাবাকে বলে “ছোট মেয়ে খুব জেদি তোর বউ যা তৈরি করেছে দেখগা কি করে মানুষ করবি” । তার সাথে আমার মা বাবাকেও এমনভাবে গালিগালাজ করতো যে আমি এখানে বলতে পারবোনা। বাড়িতে কেউ এসে আদ্রিজাকে কোলে নিতে চাইলে আদ্রিজা কান্না শুরু করত তখন তার ঠাকুরমা বলতো এ মেয়ে কারো কোলে যায় না, মা যা তৈরি করেছে না! অনেক সময় এমনও হয়েছে যে আদ্রিজা কে নিয়েই বাথরুম যেতে হতো, কোলে নিয়ে খেতে হতো। বাড়ির লোকেরা ওর বাবা কে বলতো তোর বউ যেভাবে মেয়েকে তৈরি করছে তাতে দেখবি সময়ে তোর কোন দিন খাবার জুটবে না। এক বছর বয়সে ওকে যখন কোন অনুষ্ঠান বাড়ি নিয়ে যাওয়া হতো তখন খুব কান্নাকাটি করত। তাই আমাকে আদ্রিজা কে নিয়ে অনুষ্ঠান বাড়ির একটা রুমে বা এক কনে থাকতে হতো যাতে কেউ আদ্রিজাকে দেখতে না পায়, কারণ কেউ দেখলেই আদ্রিজাকে কোলে নিতে চাইতো আর আমার সাথে কথা বলতে চাইতো যেটা আদ্রিজা পছন্দ করত না। আদ্রিজা শুধু আমার ডাকে সাড়া দিত আর অন্য কারো ডাকে সাড়া দিত না, তাই অনেকে বারবার বলতো তোমার ছোট মেয়েটি কালা। আদ্রিজা দেড় বছর বয়সের পর হাঁটতে শিখেছে, দু বছর বয়সের পর আদ্রিজার মুখে কথা ফুটেছে। আদ্রিজা দেরিতে কথা বলেছে বলে অনেকে বলত আদ্রিজা শুনতে পায় না বলে মুখেও কথা বলতে পারে না। শ্বশুরবাড়িতে অনেকে আমার আদ্রিজাকে কালা, কালানি, গুঙ্গি এসব বলে ডাকত। কোন সন্তানকে এসব বললে সেই সন্তানের মায়ের মনের ভিতরে কি হয় তা কাউকে বলে বোঝানো যায় না, তাই সারাদিনের পর রাতে ঘুম হত না, কাউকে নিজের ভিতরের খারাপ লাগাটা বোঝানো যেত না। আদ্রিজা কথা বলতে পারলেও আদ্রিজার কথা কেউ বুঝতে পারত না, কারন ওর কথাগুলো স্পষ্ট ছিল না তাই শ্বশুরবাড়িতে অনেকে বলত আদ্রিজা তোতলা হবে। আদ্রিজা বেশিরভাগ কথাই ইশারাতে বলতো, আদ্রিজার সেন্সটা খুব কম ছিল যেমন কোথাও আঘাত লাগলে অন্য বাচ্চাদের মত কান্নাকাটি করত না, খিদে পেলেও বলত না, তাই আমাকে আদ্রিজাকে একটু বেশি সময় দিতে হতো বলে অনেকে আদ্রিজার দিদিকে বোঝাত যে তোকে কেউ ভালবাসে না, আদ্রিজা ফর্সা বলে ওকেই সবাই বেশি ভালোবাসে।
আদ্রিজাকে তিন বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি করা হয়, আদ্রিজা স্কুলে কারো সাথে কথা বলত না, দিদিমণিরা কিছু করতে বললে করতো কিন্তু কিছু কথা বলতে বললেই কান্নাকাটি করত। একবার স্কুলে আঘাত পেয়ে আদ্রিজার মাথার একটা জায়গা একটু ফুলে যায়, পরে ওকে ঘরে ওই আঘাতের কথা জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলতে পারেনি। ওকে নিয়ে কেউ খারাপ কথা বললেই আমার খুব রাগ হতো কিন্তু কাউকে কিছুই বলতে পারতাম না। ওর মা-বাবা মানে আমাদেরকে চিন্ত ওর (আদ্রিজার) দিদি মানে পিয়ালির মা, পিয়ালির বাবা এই হিসেবে। ওর বাবার রাগ খুব বেশী, তাই আমার বড় মেয়ে পিয়ালী একটু পড়াশোনাতে ভুল করলেই পিয়ালীকে বেধড়ক মারতো। বাবার এই রাগ দেখে আদ্রিজার মনে ধারণা হয় বাবা মানেই ভয়। আদ্রিজা ওর বাবার কাছে যেত না বলে অনেকের একটা ধারণা হয় আমি আদ্রিজার মনে ওর বাবার প্রতি খারাপ ধারণা তৈরি করে দিয়েছি। বড় মেয়ে পিয়ালী কে যখন নাচের ক্লাসে নিয়ে যেতাম তখন ছোট মেয়ে আদ্রিজা কেউ নিয়ে যেতাম, আদ্রিজা আমার কোলেই থাকতো লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করত, এই ভাবেই কয়েক মাস কেটে যায় ৷ মাস ছয়েক পর, একদিন দেখলাম কোল থেকে নেমে হাত নাড়াচ্ছে। তারপর ধীরে ধীরে পিয়ালী নাচ কে নকল করতে শুরু করে, আদ্রিজার যাদেরকে খুব পছন্দ তাদের কাজ নকল করত, ওর জেদ খুব বেশি, রেগে গেলে ওকে শান্ত করা খুব কঠিন হতো, সেই সময় হাতের সামনে যা পেত তাই ছুঁড়ে দিত। বাড়ির লোক মনে করে তার এই রাগ জেদের জন্য নাকি আমি দায়ী। আমরা ছোট থেকে ওকে যে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতাম সেই ডাক্তার সবসময় বলতেন আদ্রিজা আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে আলাদা। আদ্রিজার খাওয়া ঘুম থেকে শুরু করে তার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন একটু পরিবর্তন হলেই সে রাগে চিৎকার করত। ওর যখন চার বছর বয়স তখন বুঝলাম ও বাংলা থেকে হিন্দি ভাষা টা একটু বেশি বুঝে, হিন্দি ইংলিশ এর উচ্চারণ স্পষ্ট শুধু বাংলাটা স্পষ্ট নয়। এর জন্য ওর ঠাকুমা ওকে বিহারী বিহারী বলতো এবং এটাও বলত যে বিহারীদের ঘর থেকে এসেছে। বাড়িতে কেউ আসুক সেটা ও পছন্দ করতনা, তাই নতুন কেউ এলে তাকে ঘরে ঢুকতে দিত না ৷ এমনকি যাদের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতাম তাদের বাড়িতে কেউ এলে তাকেও চলে যেতে বলতো। ও বেশি লোক পছন্দ করতোনা, কারো বাড়ি যেতে পছন্দ করত না, আমি কারো সাথে কথা বলি সেটাও পছন্দ করত না। এমনকি ওর দিদি যদি ওকে ছাড়া অন্য কারো সাথে খেলত তাহলে ওর দিদিকে মারধর করতো। ওর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন এক বিশেষ কারণে ওকে এক মাসের জন্য আমি সেভাবে সময় দিতে পারেনি তখন দেখলাম ও নিজেই এক কল্পনার জগত তৈরি করে সেই কল্পনার জগতে খেলা শুরু করেছে। আমি আগে থেকেই জানতাম আদ্রিজা আর পাঁচজন বাচ্চার মত নয় এই পাঁচ বছর বয়সেও খিদে পেলে বলতে পারেনা, পায়খানা, পেচ্ছাব পেলে কিছুই বলতে পারতনা ৷ জিদও বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে তার জন্য সবাই আমাকেই দায়ী করতে থাকে। বলতো আমি ঠিক করে মেয়েকে মানুষ করতে পারছিনা, আদর দিয়ে দিয়ে ওর ভবিষ্যৎ খারাপ করছি, আমি ওর দিকে খেয়াল না রেখে সারাদিন নাকি টিভি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কেউ বুঝতে চাইত না আদ্রিজাকে খাওয়ানো, স্নান করানো, পরানো, ঘুম পাড়ানোর জন্য আমি সারাদিন কি কি করি, এমনকি আদ্রিজার বাবাও বুঝতে চাইত না। ও বাড়ির অন্যদেরকে পছন্দ করত না বলে ওর বাবা ভাবতো আমি ওকে পরিবারের অন্য মানুষদের নিয়ে খারাপ কথা বলেছি বা খারাপ কিছু শিখিয়েছি। আমি ওকে শাসন করতাম না কারন দেখেছিলাম শাসন করলে রাগ জেদ আরো বেড়ে যায়। ওকে ছোট থেকে যে ডাক্তারবাবু দেখতেন উনি বলেছিলেন ওকে শাসন করে কিছুই করাবেন না।
আদ্রিজাকে ছয় বছর বয়সেও কেউ ডাকলে সারা দিত না বলে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলতো; কেউ বলতো কালা, কেউ বলতো শয়তান, সিয়ানা, ওর ঠাকুমা ওকে “পাগল বলে ডাকত “। ওর মতো বাচ্চাদের বড় হয়ে ওঠার জন্য যে পরিবেশ দেওয়া উচিত সেটা ঠিক করে দিতে পারিনি। সুযোগ পেলেই নিজেকে কল্পনার জগতে নিয়ে চলে যেত, ঘর থেকে বের হতে চাইত না। এই সময়ে ও অসুস্থ হলে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে, উনি বললেন আদ্রিজাকে একবার ডেভলপমেন্টাল পিডিয়াটিক দেখানো উচিত। কারণ ও ওই সময়ে নাচ করা ছেড়ে দেয়, ধীরে ধীরে ছবি আঁকা ছেড়ে দেয়, আয়নায় নিজের মুখ দেখাও বন্ধ করে দেয়, ঘর থেকে বের হতেও চাইত না। অনলাইন ক্লাসে বাচ্চারা চিৎকার করলে ও অন্য রুমে পালাতো। কেউ জোরে কথা বললে দুহাত দিয়ে নিজের কান চেপে ধরত। ওই ডাক্তারবাবুই আমাদেরকে রিবর্নের ডক্টর মন্দিরা রায়ের কাছে পাঠান। তার পর মন্দিরা ম্যাম আমাকে সৌমেন স্যারের (Psychologist) কাছে পাঠান, ওখানে গিয়ে জানতে পারি আমার ছোট মেয়ের অটিজম আছে। উনি আমাদের অটিজম এর মানে বোঝান অটিজম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। নিজের সন্তানের অটিজম আছে এ কথা শোনার পর মা-বাবার মনের অবস্থা ঠিক থাকেনা। তবে আমি আমার মনের কষ্ট চেপে রেখেই জানতে চেয়েছিলাম আমার মেয়ের ঠিক হবার সম্ভাবনা কতটা ? আর এর জন্য আমাকে কি কি করতে হবে। তবে অটিজম আছে এটা জানার পর দু’রাত ঠিক করে ঘুমোতে পারিনি। তারপর স্যার আমাকে আদ্রিজার জন্য যা যা বলেতেন আমি সব করতাম। উনি বলেছিলেন যদি আমি কোনো কাজ করি সম্ভব হলে সেটা ছেড়ে দেওয়াই ভালো, কারণ আমার পুরো সময়টা ওকে দিতে হবে। এ ছাড়াও আমি ইন্টারনেটে অটিজমদের নিয়ে অনেক কেস হিস্ট্রি দেখলাম তাতে একটা ব্যাপার বুঝতে পারলাম যে এর থেকে স্বাভাবিক হওয়া যায়, তাই আমার দিক থেকে যতটা সম্ভব আমি পুরোটাই করতাম। কিন্তু এরপরেও তেমন ইমপ্রুভমেন্ট হতো না কারণ ওর বাবা এ ব্যাপারে তেমন কোনো সাহায্য করত না। ওর বাবার ধারণা যে ওর মতে বাচ্চাদের মারধর করেই সব ঠিক করা সম্ভব, আর আমার শাসন না করার জন্যই ছোট মেয়ে এই রকম। আমি যতটা পজিটিভিটি নিয়ে ছোট মেয়েকে সামলাতাম, ওর বাবা ততটাই নেগেটিভ ছিল। আমি সৌমেন স্যারকে সমস্ত ব্যাপারটাই জানাতাম যাতে উনি আমাদের সঠিক গাইড করতে পারেন, উনি বুঝেছিলেন আমার ছোট মেয়েকে ঠিক করতে হলে আগে তার মা-বাবার কাউন্সেলিং দরকার। তবে আমরাও বিশ্বাস করতাম যে স্যার যা বলবেন তার সবটাই আমাদের মেয়ের ভালোর জন্য, তাই ওনার কথামতো আমরা দুজনেই কাউন্সেলিং নিতাম। এতে আমার লড়াইটা অনেকটা সহজ হয়ে গেল, একটা অটিজম বাচ্চাকে সামলাতে একটা মাকে কতটা পরিশ্রম করতে হয় সেটা ওর বাবাও বুঝতে পারল ফলে ওর বাবাও আমাকে সাহায্য করা শুরু করলো। আদ্রিজা কথা বলতে চাইতো না তাই সেটা ঠিক করার জন্য ওর সাথে আমি বারবার কথা বলতাম, ইচ্ছে করে ওর জানা জিনিস গুলো ভুল করতাম, তাতে রেগে গিয়ে ও ঠিক টা বলতো, রাগে অন্য রুমে চলে গেলে আমিও ওর পিছন পিছন যেতাম। ও যখন কল্পনার জগতে ঢুকে পড়ত আমিও ওর কল্পনার জগতে ঢুকে ওকে বের করে আনার চেষ্টা করতাম, কোন সময় একা ছাড়তাম না, ওকে কল্পনার জগতে ঢুকতে দিতাম না। ছয় বছর বয়সেও ও প্যান্টে পেচ্ছাপ করতো, ততক্ষণে ওর বোধের কিছুটা উন্নতি হয়েছিল এবং লজ্জা বোধ তৈরি হয়েছিল, সেটাকে কাজে লাগিয়েই ওর এই আচরণটা বন্ধ করি, আসলে সাইকোলজিস্ট এর সাহায্য নিয়ে ওর Sensory Integration Therapy (SI), Occupational Therapy (OT), Behavioral Therapy (BT), আমি নিজেই করতাম। এইভাবে চলতে গিয়ে ভালো মন্দ যাই হোক আমরা সবই সাইকোলজিস্টের সাথে আলোচনা করি। একই সাথে আমার বড় মেয়ে এবং স্বামীর কাউন্সিলিং চলত, এতে আমার অনেকটা সুবিধে হল ৷ ধীরে ধীরে ও বোনকে বুঝতে শিখলো, বুঝলো কেন মা বোনকে এত বেশি সময় দেয়, কেন বোনকে একটুও বকে না। যখন আমি সময় দিতে পারতাম না তখন ও (বড় মেয়ে) বোনকে সময় দেওয়া শুরু করলো।
সেন্সর থেরাপি আমাকে সারা দিনে দুই থেকে তিনবার দেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু আমি দিতাম পাঁচ থেকে ছয় বার, আমি ওর সাথে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা করতাম খুব সহজ ছবি দিয়ে শুরু করেছিলাম, প্রথমের দিকে আমি ওর থেকে খারাপ ছবি আঁকতাম, ইচ্ছে করেই ওরটা ভালো হতে দিতাম, ও খুব আনন্দ পেত ফলে আবার ছবি আঁকার জন্য আগ্রহ দেখাতো, যখন ছবি আঁকাটা একটু শিখে গেল তখন আমি কখনো কখনো ওর থেকে ভালো ছবি আঁকতাম তাতে ও পিছিয়ে পড়ছে দেখে আরো ভালো ছবি আঁকার ইচ্ছা প্রকাশ করত, চেষ্টা করত আরও ভালো ছবি আঁকার। ওর খিদে পেলে ও বুঝতে পারতো না, বলতেও পারত না, তাই আমরা করতাম কি যে আমি, আমার বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ে 3 জনের খাবার রেডি করে ছোট মেয়ের খাবারটা সরিয়ে রেখে আমি আর আমার বড়মেয়ে খেতে বসতাম ওর সামনে, আমাদেরকে বার-বার এইভাবে খেতে দেখে ওর মনে খাবার ইচ্ছা তৈরি হতো বলতো “আমিও খাব” । ওর সামনে জলের বোতল রেখে দিতাম আর ওকে দেখিয়ে মাঝেমধ্যেই জল খেতাম একদিন দেখলাম ও নিজেই বোতল থেকে জল খাওয়ার চেষ্টা করছে, সেদিন ওকে প্রচুর উৎসাহ দিয়েছিলাম আমিও প্রচুর খুশি হয়েছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে ও নিজের থেকে জল খাওয়া শিখে যায়। কখনো কখনো ইচ্ছে করেই ওকে বলতাম আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে জলের বোতলটা এনে দাও তো, বারবার বলার পরেও এনে দিত না, তখন আমার খুব কষ্ট হতো, প্রতিদিনই চেষ্টা চালিয়ে যেতাম কয়েকদিন পর ও একটু একটু করে আমার কথা শুনতে শুরু করলো, এই ভাবেই ধীরে ধীরে ওকে পার্কে নিয়ে যাওয়া, অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে শেখানো, অন্য বাচ্চাদের সাথে মিলে খেলতে শেখানো সব শিখিয়েছি।
ওকে প্রথমের দিকে কোনোভাবেই দোলনায় বসাতে পারতাম না খুব ছটফট করত, তাই প্রথমের দিকে ওকে দোলনায় বসিয়ে ওর হাত পা চেপে ধরে থাকতাম, কিছুক্ষণ পর দেখতাম ও শান্ত হয়ে গেছে, তারপর দোল দেওয়া শুরু করতাম।
এরপর ওকে কথা বলানোর জন্য step-by-step এগিয়েছি, ওকে প্রচুর গল্প শোনাতাম, গান শোনাতাম, এইভাবে প্রায় ছয় মাসের চেষ্টায় ও কথা বলা শুরু করে। এখনতো মাঝে মাঝে ও এত কথা বলে যে আমি চুপ করে শুনতে থাকি। ওর খাবার খাওয়ার সময়ের প্যাটার্নটা কেউ ভেঙে দিয়েছিলাম, কখনো 10 মিনিট আগে খাওয়াতাম, কখনো 10 মিনিট পরে খাওয়াতাম, কখনো ঘরে খাওয়াতাম, কখনো ঘরের বাইরে, সাইকোলজিস্টের কথামতো ওকে বাইরে নিয়ে যেতাম বাইরের সমস্ত কিছুর সাথে পরিচয় করাতাম, ওকে নিয়ে 10 দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা, যাতে বাইরের জগতের সাথে আরও কিছুটা মিশতে শেখে, যে সমস্ত আত্মীয়ের বাড়িতে বাচ্চা আছে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যেতাম, এতে ও ধীরে ধীরে ও এখন মিশতে শিখেছে। মেয়েকে নিয়ে এই 24 ঘন্টা লড়াই আমাকে বেশ কিছুটা অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে, এতে কারো কারো কাছে খারাপ হলেও কেউ আমাকে আবার অনেকটা সাহায্য করেছে, যেমন – কোন বাচ্চার সাথে খেলতে গেলে আদ্রিজা কখনো কখনো চিৎকার করে তাদের ঘর থেকে বার করে দিত, তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের বাচ্চাকে বুঝিয়ে আবার আমার মেয়ের সাথে খেলতে পাঠাত। এক সময় আমার মেয়ে ওর বাবাকে আমাদের শোয়ার ঘরে ঢুকতে দিত না, এমনকি আমার সাথে কথা বলতেও দিত না, এক্ষেত্রে ওর বাবাকেও কাউন্সেলিং এর সাহায্য নিতে হয় এখন অবশ্য বাবা মেয়ের খুবই ভালো সম্পর্ক। এখন আমার মেয়ে অনেকটা স্বাভাবিক ও নিজে নিজে সাজগোজ করে, একা একা নাচে, স্টেজ পারফরম্যান্স করে। স্টেজে ওঠার আগে অন্যদের থেকে নিজেকে কতটা ভালো লাগছে বা নিজেকে ভালো করে সাজিয়ে তোলার একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে ওর মনে। বাইরে কোথাও বেরোনোর হলে ও নিজেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে ৷ বিএভিআর্ থেরাপিতে শিখেছি বাচ্চাদেরকে কথা দিলে কথা রাখতে হয়, আমি এটা যথাসম্ভব পালন করতাম, এখন দেখি মেয়ে আমায় কথা দিয়ে কথা রাখে অনেক সময় ওর ইচ্ছা থাকে না কিন্তু তারপরেও কথা রাখার জন্য কাজটা করে। এখন ওর স্কিল ট্রেনিং চলছে ও ধীরে ধীরে নিজের সমস্ত কাজ সুন্দরভাবে শিখে নিচ্ছে। এখন আমার মেয়েকে কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না যে ওর অটিজম ছিল।
এই পুরো লড়াইটা যাদেরকে ছাড়া সম্ভবই হতো না তারা হলেন রিবর্নের মন্দিরা ম্যাম এবং সৌমেন স্যার ৷
Very well
বর্তমান যুগের কথা বলতে গেলে, লেখাটি খুব ভালো হয়েছে।
অপূর্ব
It’s a very inspiring story for all mothers
Khub sundor ekti inspiring story
Good
Khub khub khub bhalo laglo pore
আমাদের পাড়াতে অনেক আগে একটি অটিজম আক্রান্ত বাচ্চা থাকত কিন্তু তারা এখন অন্য কোথাও চলেগেছে
Awesome
Sir, one of the best motivational story
দারুন
অসাধারন , পুরোটা পড়ে খুব ভালো লাগলো ৷
Mind-blowing success story
Eto sundor golpo prothom bar porlam darun laglo
এই গল্পটি পড়ার পর আমি বুঝতে পারছিনা যে আমি ঠিক কি লিখবো?
Durgapur Bankura Chember location deben lekha gulor sathe Oneker upakar hobee
❤️
Bhalo
Good
Darun ❤️
Arokom golpo ro chai
Best
I am telling proud for this mother ❤️
অসাধারণ !