ব্রেকআপের পর নিজেকে সামলাবো কিভাবে ?
-Psychologist Soumen Mondal

আমদের প্রেমের বয়স যত বাড়ে, প্রেমের জটিলতা বাড়ে তত গুন, বিচ্ছেদের যন্ত্রণা আরো গভীর থেকে তছনছ করে দেয় আমাদের। তারপর তাকে আবার ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসার পালা।
বিচ্ছেদের পর টুকরো-টুকরো হৃদয়কে আবার জোড়া লাগিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা বিষয়টা কিন্তু খুব সহজ নয়, যারা এই যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েছে তারাই জানে এই যন্ত্রণার গভীরতা কতটা।
আমাদের মন ও প্রকৃতির মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক আছে, তাই এই বিচ্ছেদের বিষয়টা এই প্রকৃতির সাহায্য নিয়েই বোঝার চেষ্টা করব। আমাদের পৃথিবীর এই প্রকৃতি কখনো শূন্যতা মেনে নিতে পারে না। আর যদি কোনভাবে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তখন প্রকৃতিতে প্রলয়ের জন্ম হয়, কারণ এই প্রলয়ের মাধ্যমেই প্রকৃতি তার শূন্যতা পূরণ করে। যেমন ধরুন সমুদ্রপৃষ্ঠে যখন অতিরিক্ত গরমে বাতাস গরম হয়ে, হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় তখনই সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ু শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তখনই এই ফাঁকা জায়গাকে পূরণ করার জন্য চারিদিক থেকে ঠান্ডা ও ভারী বাতাস ছুটে আসে, সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়ের। প্রকৃতির এই প্রলয় তাণ্ডব নৃত্য ততক্ষণ চলতে থাকে যতক্ষণ না তার শূন্যতা, পূর্ণতায় রুপান্তরিত হচ্ছে। এবার ভাবুন ঘূর্ণিঝড়ের এই ভয়ঙ্কর রূপ উপকূলের কি দশা করে।
বিচ্ছেদের পর ঠিক একই রকম অবস্থা হয় আমাদের মনের, বাতাসের ওই তর্জন-গর্জন আসলে শূন্য মনের হাহাকার।
সমুদ্রপৃষ্ঠে বাতাসের শূন্যতা যত গভীর হয় তত ভয়ঙ্কর হয় তাণ্ডব নৃত্য, ততো বেশি ক্ষতি হয় উপকূলবর্তী অঞ্চলের। ঠিক তেমনি প্রেমের গভীরতা যত বেশি হয় বিচ্ছেদের পর মনের শূন্যতা ও ততো বেশি হয় আর তার যন্ত্রনাও ততটাই বেশি, ততটাই গভীর ক্ষত তৈরি হয় মনের মধ্যে।
এখানে প্রশ্ন হলো প্রকৃতি না হয় তার তাণ্ডব নৃত্যের মধ্য দিয়ে নিজের শূন্যতাকে পূরণ করে কিন্তু আমরা তো মানুষ, আমরা তো আর তাণ্ডব নৃত্য করতে পারি না, তাহলে আমরা কি করব? কি করে রেহাই পাব এই গভীর যন্ত্রণা থেকে?
এই প্রশ্নের একটা সহজ উত্তর হল মনের শূন্যতাকে পূর্ণতা দান অর্থাৎ মনের শূন্যতার জন্য যেহেতু এত সমস্যা তাহলে ওই শূন্যতাকে পূরণ করে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়। বিষয়টা বেশ জটিল, যত সহজে প্রকৃতি তার শূন্যতা পূরণ করতে পারে, ততো সহজে মানুষ তার মনের শূন্যতা পূরণ করতে পারেনা, কারণ এই শূন্যতার সাথে আবার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটা গভীর যোগসূত্র আছে। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি বিচ্ছেদের পর অনেকেই সহজে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেনা তাদের বারবার মনে হয় আবার যদি বিচ্ছেদ হয়, বা আবার যদি প্রতারিত হই। ফলে যতক্ষণ না এই অবিশ্বাসের স্তম্ভ মন থেকে সরে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এরা শূন্যতার যন্ত্রণা ভোগ করে এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারে না। প্রেমের গভীরতা ও মনের গঠনশৈলীর উপর নির্ভর করে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা থেকে সে কিভাবে বেরিয়ে আসতে পারবে এবং কত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে পারবে।
প্রেমের গভীরতা
যে মানুষটি যত গভীর প্রেমের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে সে তার মনের ততবেশি জায়গা তার প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য ছেড়ে দেয় অর্থাৎ সেই জায়গাটি তার প্রেমিক বা প্রেমিকার দখলে চলে যায়। এরপর হঠাৎ করে তার প্রেমিক বা প্রেমিকা যদি চলে যায় তখন তার ভেতরে শূন্যতাটা ততো বেশি হবে এবং বড় জায়গায় স্মৃতির পাহাড় ও অনেক বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আর যতক্ষণ না এই পুরনো স্মৃতির জায়গা নতুন স্মৃতি দখল করছে ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব নয়।
মনের গঠনশৈলী।
মনের গঠনশৈলী অনেকের আবেগ নির্ভর আবার অনেকের বুদ্ধি নির্ভর হয়ে থাকে। যাদের মনের গঠনশৈলী বুদ্ধি নির্ভর তারা খুব সহজেই এই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, কারণ তারা পুরো বিষয়টাকে বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে এবং তাদের মনের শূন্যতাকে খুব তাড়াতাড়ি পূরণ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু যাদের মনের গঠনশৈলী আবেগ নির্ভর হয় তারা সহজে নিজের মনের শূন্যতাকে পূরণ করতে পারেনা, তারা মনের শূন্য ঘরে পড়ে থাকা স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরে হাহাকার করতে থাকে এবং অপেক্ষা করতে থাকে চলে যাওয়া মানুষটির জন্য, যদি সে ফিরে আসে… সে ফিরে আসবেনা নিশ্চিত হলেও পুরনো স্মৃতিগুলোকে ছাড়তে পারে না। তাই যখনই আপনি এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়বেন তখনই শান্তভাবে…
প্রথমতঃ প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনার প্রেমের গভীরতা কেমন ছিল? একটু ভালোবাসা পাওয়ার লোভে আপনি আপনার মনের কতটা জায়গা অন্যের কাছে বন্ধক রেখে ছিলেন? সেই অনুযায়ী মানসিক ধাক্কা সামলানোর মতো আপনাকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ আপনি নিজেই নিজেকে বিশ্লেষণ করে দেখুন আপনার মনের গঠনশৈলী আবেগ নির্ভর না বুদ্ধি নির্ভর, যদি আবেগ নির্ভর হয় তাহলে বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে দেখুন আপনার মনের একটি ঘর ভালোবাসার বিনিময়ে কারো কাছে বন্ধক রেখে ছিলেন, সে ঘর ছেড়ে চলে গেছে। তাই তার কাছ থেকে আপনি যে ভালোবাসা পাচ্ছিলেন সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু শূন্য ঘরে তার স্মৃতি গুলো ভিড় করে আছে, তাই এত যন্ত্রনা, তাই এখান থেকে বের হতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ঘরটিকে পরিষ্কার করে ওই শূন্যতা টা পূরণ করতে হবে। যাদের মনের গঠনশৈলী বুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল তারা তো এই কাজটা অনায়াসেই করতে পারবেন।
তৃতীয়তঃ বিচ্ছেদের পর মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত একটা গুমোট পরিস্থিতির জন্ম নেয়, যেটা যন্ত্রণাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই এর থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে একটা নিরাপদ উপায় খুঁজে বের করতে হবে অর্থাৎ আপনার ভেতরে জমা হতে থাকা যন্ত্রণা গুলো কারো সাথে ভাগ করে নিতে হবে, সেই কারণেই নিরাপদ উপায় এর দরকার। না হলে পরবর্তীকালে আপনার স্বাভাবিক জীবনে সমস্যার উৎপন্ন করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে নিজের কষ্টগুলো ভাগ করার জন্য কোন মনোবিদ এর সাহায্য নিন বা ডায়েরিতে সমস্ত কথা লিখে রাখুন। তবে এই সময়ে বলে হালকা হওয়াটা বেশি দরকার।
চতুর্থতঃ তার দেওয়া কোন স্মৃতিচিহ্ন যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে সেটা নষ্ট করে দিন বা এমন জায়গায় সড়িয়ে দিন যাতে সেগুলো আপনি সহজে না দেখতে পান, নইলে এই স্মৃতি চিহ্ন গুলো আপনাকে বারবার বিচ্ছেদের পুরো যন্ত্রনাটাই ফিরিয়ে দেবে।
পঞ্চমতঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সাথে যোগাযোগের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিন। তার ফোন নম্বর ডিলিট করে দিন, কাজটা এমন ভাবেই করুন যাতে আপনার ইচ্ছে হলেই খুব সহজে তার প্রোফাইল আপনি চেক করতে না পারেন, তার গতিবিধির ওপর আপনি নজর রাখতে না পারেন। বন্ধুরা তার কথা যাতে আপনার কাছে না বলে তার ব্যবস্থা করুন। তার স্মৃতি জড়িত জায়গাগুলিতে চেষ্টা করুন না যাবার।
ষষ্ঠতঃ যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকেই নিজের উন্নতির কথা চিন্তা করুন, প্ল্যানিং করুন কিভাবে নিজেকে আরও উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারেন। নিজেকে ব্যস্ত করে তুলুন, এতটাই ব্যস্ত করে তুলুন যেন নিজের কথা ভাবার সময় না পান।
দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারছেন।
আপনি যদি আমার সাথে যোগাযোগ করতে চান তাহলে এই নম্বরে আমাকে কল করুন 7685937410
WhatsApp
Facebook
Telegram
Twitter
LinkedIn
Email