আসুন ভালো অভিভাবক হই
বেশিরভাগ বাবা-মা চায় তার সন্তান জিনিয়াস হোক, কিন্তু মা-বাবা বুঝে উঠতে পারেনা যে, কি করলে তাদের
সন্তান জিনিয়াস হবে।
এই প্রবন্ধে, এই ব্যাপারে আমি অনেক বিষয়ের মধ্যে মাত্র দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
১) সন্তানকে গল্পের মাধ্যমে নির্দেশ ২) ইতিবাচক চিন্তাভাবনা।
বর্তমান সময়ে অভিভাবকরা প্রায় সময় তাদের নিজের ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে।
ফলে ভীষন রেগে গিয়ে মারধোর বকাবকি প্রভৃতি করতে থাকেন। এখন আমি যদি বাবা-মা দের বলি সন্তানের উপর ধৈর্য্য হারাবেন না মারধোর বা বকাঝকা করবেন না তাহলে কি বাবা মা এই কাজগুলি থেকে বিরত থাকতে পারবেন, সম্ভবত না। কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় ও পরিস্থিতি বাবা-মাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় ঐ নির্দিষ্ট সময় ও পরিস্থিতি গুলোকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তবে এই ব্যাপারে আমি বিশদ আলোচনা এই প্রবন্ধে করব না।
বাবা মায়ের সন্তানের প্রতি অধৈর্য্য হওয়ার একটা কারণ খুব সংক্ষেপে আলোচনার পর আমি মূল আলোচ্য বিষয়ে ফিরে আসব।
বাবা-মা অধৈর্য্য হয়ে পড়ে এর একটা বড় কারণ হলো সন্তান তাঁদের কথা শোনে না বা বাবা-মা যখন কোন কথাবলে তখন মাথা নিচু করে সব শোনার পর সন্তান খুব জোর করে এক ঘন্টা ঠিক থাকে তারপর আবার
আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যায়।
এই চেষ্টা একই পদ্ধতিতে বারবার করেও যখন কোনো ফল পাওয়া যায়না অভিভাবকের মনে তখন নিরাশা বা হতাশা জন্ম নেয়, আর এই হতাশা-ই বাবা-মা কে উত্তেজিত করে তোলে। আর এর ফলে মার খেতে হয় বেচারা
সন্তানকে।
অভিভাবক কেন অধৈর্য্য হয়ে পড়ে সেটা তো বোঝা গেল, এখন প্রশ্ন হলো সন্তান কেন কথা শোনে না? এর আসল কারণটা কোথায়? তাহলে কি সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে?
বর্তমানের বাবা-মায়েরা তো শৈশবে এত অবাধ্য ছিল না।তাহলে এরা কেন এমন করছে? এরকম হাজারো প্রশ্ন আপনাদের মনের মধ্যে আসতে পারে, যার সমাধান সূত্র না পেয়ে নিজের মধ্যেই ধীরে ধীরে হতাশা বাড়তে থাকে।
এই ক্ষেত্রে যদি ভাল করে দেখেন তাহলে দেখবেন সমাজ খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, আপনার শৈশব থেকে
আপনার সন্তানের শৈশবের মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে, বর্তমান শিশুদের কাছে অপর্যাপ্ত রঙিন স্বপ্নের
হাতছানি, ফলে এই রঙিন স্বপ্নের কাছে বাবা-মায়ের এই নিরস উপদেশ গুলো শুনে মনে রাখা এবং তা পালন
করা তাদের কাছে অনেক বেশি কঠিন হয়। আমি যদি আপনাদের ধৈর্য্য হারাতে বারন করি তাহলে আপনি
যেমন আমার কথা শুনে ধৈর্য্য হারানো বন্ধ করে দিতে পারবেন না, ঠিক তেমনি আপনার সন্তানের ও একই
অবস্থা।
এখন এখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি? এক্ষেত্রে আমি বলব, সন্তানকে সরাসরি নির্দেশ বা উপদেশ দেয়া বন্ধ করে দিন। কারণ সরাসরি নির্দেশ বা উপদেশ যাই হোক না কেন তা আসলে নিরস। শুধু নিরসই নয় এটি বহু পুরনো একটি কৌশল।যা বর্তমান সময়ে প্রায় অকেজো। আর এই অপর্যাপ্ত রঙিন স্বপ্নের মাঝে এই নিরস উপদেশ যে শিশুদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না সেটাই তো স্বাভাবিক।বা সে যদি পালনের চেষ্টাও করে, তবে এত আনন্দের উপকরণ এর মাঝে নিজেকে ধরে রাখা কি খুব সহজ হবে?
তাই এক্ষেত্রে আমরা আমাদের নির্দেশ কোন ছোট গল্প বা কার্টুনের মধ্য দিয়ে দিতে পারি, তাহলে বিষয়টা অনেক বেশি কার্যকর হবে।কারন নিরস উপদেশের থেকে মনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা অনেক বেশি আছে গল্পের মধ্যে।
ইতিবাচক ভাবনা ভালো করে চিন্তা করলে দেখতে পাবেন আমরা, মানে মা- বাবা বা শিক্ষক-শিক্ষিকারা ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে কথা খুব কম বলি। ধরুন শিশু কিছু ভুল করল আমরা ধমক দিয়ে দিলাম, অনেক সময় তো এমনও দেখা যায় যে শিশু বুঝতেই পারেনা সে কেন ধমক খেলো, অথচ দেখুন আমরা প্রত্যেকে শিখতে গিয়ে ভুল করি। তাহলে এটাই তো স্বাভাবিক যে, যে-ই শিখতে যাবে সেই ভুল করবে বা ভুল হবার সম্ভাবনা থাকবে।তাহলে এর জন্য সে কেন বকা বা ধমক খাবে?
আসুন এই ব্যাপারে একজন জিনিয়াস বাচ্চার মা কি করে দেখে নিই। একদিন একটি শিশু স্কুল থেকে ফিরে একটি চিঠি তার মায়ের হাতে দিয়ে বলল মাস্টারমশাই এটি তোমাকে দিতে বলেছেন।
মা সেই চিঠি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লেন, পড়া শেষ হতে শিশু মা কে জিজ্ঞাসা করল, মা এই চিঠিতে কি লেখা আছে? মা উত্তর দিল বাবা এই চিঠিতে লেখা আছে তুমি তো খুব জিনিয়াস, তাই তোমাকে পড়ানোর মতো ব্যবস্থা ঐ স্কুলে নেই। তোমাকে পড়ানোর দায়িত্ব যেন আমি নিই। তাই কাল থেকে তুমি আমার কাছে পড়বে। এই ঘটনার অনেক বছর পর মা মারা যেতে মায়ের সমস্ত পুরনো জিনিস পত্র দেখতে গিয়ে একটি বাক্স থেকে এটি চিঠি বেরিয়ে আসে।তখন ছেলেটি চিঠি পড়ে বুঝতে পারে এটি ছেলেবেলার সেই চিঠি। তাতে লেখা ছিল আপনার ছেলে স্বাভাবিক নয়, তাই স্বাভাবিক ছাত্রদের সাথে ওকে এই স্কুলে পড়ানোর মতো কোনো পরিকাঠামো নেই, তাই দয়া করে ওকে আর স্কুলে পাঠাবেন না।
জানেন এই ছেলেটি কে? ইনি হলেন পৃথিবীর বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস এলবাট এডিসন। ভেবে দেখুন মায়ের একটা ইতিবাচক ভাবনা কিভাবে সন্তানের জীবন থেকে অন্ধকার দূর করে দিয়েছিল, শুধু তাই নয়, এই ছেলেই তো বড় হয়ে বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কারের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর অন্ধকার দূর করেছে।
তাই আমি বলব আজ থেকে সন্তানের সাথে ইতিবাচক কথা বলুন। তিনটি অঙ্কের মধ্যে যদি দুটো ভুল করেই থাকে তবুও বলুন এইতো তুমি একটা পেরেছো। আমি জানি তুমি পারবে। তুমি আসলে জিনিয়াস।
*****
– সৌমেন মণ্ডল
❤️❤️❤️❤️
Good